• বৃহস্পতিবার , ১৮ এপ্রিল ২০২৪

আসল চোর বাচ্চুকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে ফের আরও ২৩ মামলা দুদকের


প্রকাশিত: ২:১৭ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪৬ বার

Basic-Bank-Chairman-Sheikh_লাবণ্য চৌধুরী.ঢাকা:  বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় আরও ২৩টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলাম ও ডিএমডি ফজলুস সোবহান বেশির ভাগ মামলাতেই আসামি হয়েছেন। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নাম ওই জালিয়াতির ঘটনায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হলেও এ ২৩টি মামলাতেও তাঁর নাম নেই।অভিজ্ঞ মহল বলাবলি করছেন দুদক এখনও আসল চোরকেই ধরছেনা।
আজ মঙ্গলবার রাতে মতিঝিল থানায় চারটি, পল্টন থানায় আটটি এবং গুলশান থানায় ১১টি মামলা করেন দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। এসব মামলায় প্রায় ৭৮১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২৩ মামলায় আসামির সংখ্যা ১৮৫ জন হলেও অনেকেই একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় সেখানে ব্যক্তির সংখ্যা ৬৯ জন।
আসামির তালিকায় থাকা ৬৯ জনের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা রয়েছেন ২২ জন। ঋণগ্রহীতা ২৪টি প্রতিষ্ঠানের ৩৬ জন এবং সার্ভে প্রতিষ্ঠানের ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে ৭ জন নতুন করে আসামি হয়েছেন। বাকি ১৫ জন সোমবার করা ১৮ মামলাও আসামি ছিলেন। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধেও সোমবার মামলা হয়।
গতকাল করা দুদকের ২৩টি মামলার মধ্যে বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম এবং বর্তমান ডিএমডি ফজলুস সোবহানকে আসামি করা হয়েছে ১৮টি করে মামলায়। বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ১৪টি, বর্তমান ডিএমডি কনক কুমার পুরকায়স্থ ৯টি, মো. সেলিম দুটি মামলায় আসামি হয়েছেন। সাবেক এমডি এ কে এম সাজেদুর রহমান তিনটি ও সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মঞ্জুর মোরশেদকে আসামি করা হয়েছে পাঁচটি মামলায়।
এ ছাড়া ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখার সাবেক শাখাপ্রধান মোহাম্মদ আলী ছয়টি মামলায়, একই শাখার সাবেক শাখাপ্রধান মো. মোজাম্মেল হোসেন তিনটি, গুলশান শাখার সাবেক শাখাপ্রধান শিপার আহমেদ দশটি, সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক এস এম ওয়ালিউল্লাহ একটি, গুলশান শাখার সাবেক ক্রেডিট ইনচার্জ এস এম জাহিদ হাসান নয়টি, প্রধান কার্যালয় ক্রেডিট কমিটির সাবেক জিএম খন্দকার শামীম হাসান ৫টি, দিলকুশা শাখার সাবেক শাখাপ্রধান গোলাম ফারুক খান চারটি এবং শান্তিনগর শাখার ক্রেডিট ইনচার্জ সরোয়ার হোসেন একটি মামলায় আসামি হয়েছেন।
নতুন করে আসামি হয়েছেন বেসিক ব্যাংকের সাত কর্মকর্তা। দিলকুশা শাখার সাবেক ক্রেডিট ইনচার্জ পলাশ দাশগুপ্ত ২টি, একই শাখার এজিএম ও ক্রেডিট ইনচার্জ জহির উদ্দিন ২টি, সাবেক কোম্পানি সচিব ও প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির সদস্য শাহ আলম ভূইয়া, প্রধান কার্যালয় ক্রেডিট কমিটির সাবেক জিএম আবদুল হাদী গোলাম সানজারী, কমার্শিয়াল ক্রেডিট ডিভিশনের সাবেক জিএম কোরবান আলী, ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের এজিএম ইমরুল ইসলাম ও গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও ক্রেডিট ইনচার্জ মহিবুল হক একটি করে মামলার আসামি হয়েছেন।
ঋণগ্রহীতা যেসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাঁদের মধ্যে ভাসাবী ফ্যাশন, তাহমিনা ডেনিম ও তাহমিনা নীটওয়্যারের ইয়াসির আহমেদ খানের বিরুদ্ধে তিনটি, ভাসাবী ফ্যাশন ও তাহমিনা ডেনিমের কামাল জামান মোল্লার বিরুদ্ধে দুটি, তাহমিনা ডেনিম ও তাহমিনা নীটওয়্যারের কাজী রিজওয়ান মোমিনুল হকের বিরুদ্ধে দুটি এবং ভাসাবী ফ্যাশনের আজমল হক আযিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। দুটি করে মামলা হয়েছে প্রোপেল ইন্টারন্যাশনাল ও টেলিওয়েজ ইন্টারন্যাশনালের শওকত আজিম ও রিজিয়া বেগমের বিরুদ্ধে। সৈয়দ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও আলী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সৈয়দ হামদুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুটি, সৈয়দ রিয়েল এস্টেটের রোজিনা জামানের বিরুদ্ধে একটি, আলী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাহবুবুল আলম ও আহাদুজ্জামান বাতেনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে। এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের সৈয়দ হাসিবুল গণি, মনোয়ারুল ইসলাম, এ এস এম মনিরুলইসলাম, সজন কুমার বসাক ও অমিতাভ ভৌমিক এবং নীল সাগর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের (ফিড মিল ইউনিট) আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়েছে।
এ ছাড়াও মামলা হয়েছে ডায়নামিক ট্রেডিংয়ের আবুল কালাম মো. রায়হান, এলআর ট্রেডিংয়ের লুৎফা বেগম ও রফিকুল ইসলাম, আহমেদ অয়েলের আশরাফ আহমেদ ও নাসরিন জাহান রতনা, আমিরা শিপিংয়ের গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, রিলায়েন্স শিপিংয়ের আসিফ ইকবাল, এশিয়ান শিপিংয়ের আকবর হোসেন, এআরএসএস ইন্টারন্যাশনালের সাবির হোসেন, সিলভারকম ট্রেডিংয়ের সাইফুল আজম পলাশ, এশিয়ান ফুড ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানির আবদুল বারী খান, বি আলম শিপিং লাইনের মোহাম্মদ বশিরুল আলম, লাইফ স্টাইল ফ্যাশন মেকারের মিসেস নার্গিস হোসেন ও আবুল হাসেম, খাদিজা অ্যান্ড সন্সের শামিম হাসান, সিমেক্স লিমিটেডের রাশেদুল হাসান ও নুসরাত জাহান, গুঞ্জন এগ্রো এরোমেটিক অটো রাইস মিলের আইনুল হক সোহেল, সৈয়দ ট্রেডার্সের সৈয়দ মাহবুবুল গণি ও সুলতান আহমেদের বিরুদ্ধে।
সার্ভে প্রতিষ্ঠান এসডি সার্ভের ব্যবসায়িক অংশীদার ইকবাল হোসেন ভূইয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সাতটি। একই প্রতিষ্ঠানের চিফ সার্ভেয়ার ও পার্টনার মো. ফারুক ছয়টি, ম্যানেজার অ্যান্ড সিনিয়র সার্ভেয়ার আবু সুফিয়ান একটি, রূপসা সার্ভেয়ারের সিনিয়র সার্ভেয়ার জহিরুল ইসলাম দুটি, একই প্রতিষ্ঠানের শাহজাহান আলী একটি, পিএসআর সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন কোম্পানির চিফ সার্ভেয়ার জসিম উদ্দিন চৌধুরী ৩টি, বিডিএস এডজাস্টার্সের প্রধান নির্বাহী ইবনে মোফাজ্জল বকরী একটি, ইউনিক সার্ভিস ব্যুরোর সিরাজুল ইসলাম দুটি, প্রফেশনাল এসোসিয়েটসের মোহিতুজ্জামান খান, দেশ পরিদর্শন কোম্পানির শফিকুল ইসলাম ও আইএইচএসের খন্দকার গোলাম মোস্তফা একটি করে মামলায় আসামি হয়েছেন।
বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় সোমবার মামলা হয় ১৮টি। ওইসব মামলায় প্রায় ৬৫৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ব্যাংকের ১৯ জন কর্মকর্তা ও ঋণ গ্রহীতা ২০টি প্রতিষ্ঠানের ৩১ জন এবং চারটি সার্ভে প্রতিষ্ঠানের ছয়জন আসামি হয়েছেন মামলায়।
বেসিক ব্যাংকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ৫৬ মামলার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। কমিশনের অনুসন্ধানে দুই হাজার নয় কোটি টাকার জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। দুইদিনে ৪১টি মামলায় এক হাজার ৪শ ৩৫ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ করা হয়। বাকি ১৫টি মামলা আজ বুধবার করা হবে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।
দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘অনুসন্ধান পর্যায়ে পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়নি। তদন্ত পর্যায়ে এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।’ সবগুলো মামলা করার পর অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।